Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভাইরাস প্রতিরোধী গাছপালা

ভাইরাস প্রতিরোধী গাছপালা
মৃত্যুঞ্জয় রায়

ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত নোবেলজয়ী বৃটিশ প্রাণিবিজ্ঞানী স্যার পিটার মিডাওয়ার ভাইরাস সম্পর্কে এক মজার কথা বলেছেন। তিনি ভাইরাসকে বলেছেন, ‘ওটা প্রোটিন আবৃত এক টুকরো দুঃসংবাদ...’। আসলেই ভাইরাস যে কতবড় দুঃসংবাদ হয়ে আবির্ভূত হতে পারে তা এখন বিশ্ববাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ভাইরাস শব্দটি এখন আর বিশ্বের কারো কাছে অপরিচিত নয়। ভাইরাস কত সহজে মানুষ মেরে ফেলছে, কিন্তু মানুষের হাতে ভাইরাসকে মারা অস্ত্র তেমন কিছুই নেই। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম। শুধু করোনা ভাইরাসই নয়। বিশ্বে মানুষ ও প্রাণীর বহু মারাত্মক ব্যাধির কারণ নানা ধরনের ভাইরাস। এর মধ্যে বেশ কিছু ভাইরাস রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। কিছু ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য মানুষ লোক চিকিৎসার দ্বারস্থ হচ্ছে। এসব লোক চিকিৎসার মূল প্রাকৃতিক উৎস হলো গাছপালা।


বিশ্বজুড়ে ভাইরাসের রাজত্ব
আমাদের এই গ্রহে কত ভাইরাস আছে? সে হিসেবও বিজ্ঞানীরা করে ফেলেছেন, তবে তার হিসেব আমাদের সাদামাটা হিসেবে কুলাবে না। পৃথিবীতে প্রায় ১০৩১ রকমের ভাইরাস আছে। তার মানে সংখ্যাটি হলো ১০ এর পরে একত্রিশটা শূন্য। এর একটি হলো করোনা ভাইরাস। বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্র ২০০ লিটার সাধারণ পানির মধ্যেই নাকি ৫০০০ জেনোটাইপের ভাইরাস থাকে। পৃথিবীর এমন কোন স্থান বা পরিবেশ নেই যেখানে ভাইরাস না আছে। গাছে, পানিতে, মাছে, প্রাণীতে, গভীর সাগরে, মেরুর বরফে, গরম-ঠাণ্ডা সব পরিবেশেই ভাইরাস রয়েছে। সাগরের ২০০০ মিটার গভীরেও মিলেছে ভাইরাসের সন্ধান। তার মানে গোটা গ্রহ জুড়ে রয়েছে ভাইরাসদের এক দাপুটে রাজত্ব। অদৃশ্য সেই রাজত্বের মহাশক্তির কাছে মানুষ যেন অসহায়। এসব ভাইরাসের মধ্যে কিছু ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের রোগ সৃষ্টি করে থাকে, গাছেও রোগ সৃষ্টি করে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে মৃত্যুর প্রধান দশটি কারণের একটি হলো ভাইরাস জীবাণু। হার্পস, এইচআইভি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জন্ডিস বা হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু, পোলিও প্রভৃতি ভাইরাসজনিত অন্যতম প্রধান রোগ। সাথে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। এসব রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় আধুনিক ঔষধের দ্বারা করা খুব কঠিন।


ফিরে যাই প্রকৃতির কাছে
প্রকৃতি আমাদের জীবনের মূলসূত্র। তাই সেখানেই রয়েছে আমাদের জীয়নকাঠি। গবেষকরা যুগ যুগ ধরে প্রকৃতি থেকে এমন কিছু গাছপালা খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন যেগুলোর ভাইরাস প্রতিরোধী বা বিনাশী গুণ আছে। এসব গাছপালা হয় দেহে ভাইরাসকে অনুপ্রবেশে বাধা দেয় অথবা অনুপ্রবেশের পর তার কার্যকারিতাকে বাধা দেয়। কিছু গাছপালায় এমন কিছু প্রাণরাসায়নিক উপাদান আছে যা ভাইরাস দেহে ঢুকলেও আশ্রয়দাতার দেহকোষের ভেতরে সেসব ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধিকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ভাইরাস আর আশ্রয়দাতার দেহে সহজে রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। পাকিস্তানের একদল গবেষক মুহাম্মদ নোমান সোহেল ও তার সাথীরা
Allium sativum (রসুন), Daucus maritimus (বন্য গাজর),  Helichrysum aureonitens (সোনামুখী), Pterocaulon sphcelatum, Quillaja saponaria   ইত্যাদি গাছের মধ্যে ভাইরাস বিরোধী বেশ কিছু সক্রিয় উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন যা দিয়ে ভাইরাস রোগের চিকিৎসার জন্য ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেই গবেষণাপত্রটি ২০১১ সালে এশিয়ান জার্নাল অব এনিম্যাল এন্ড ভেটেরিনারি এ্যাডভান্সেস এর ৬ষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। গবেষকবৃন্দ বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানকৃত ভাইরাস বিরোধী গাছপালার একটি পর্যালোচনাও করেছেন। পর্যালোচনা করে বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে, ৫৭টি উদ্ভিদ হার্পস ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ও এইচআই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ।


ইনফ্লয়ঞ্জা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে Camelia sinensis (চা), Cistus incanus, Echinacea purpurea, Geranium sanguineum, Narcissus tazetta, Pandanus amaryllifolius (পোলাও পাতা), Scutellaria baicalens রঙ ইত্যাদি। সিস্টাস ইনকানাস গাছ ইবোলা ও এইচআই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। জন্ডিস বা হেপাটাইটিস সি রোগের ভাইরাস জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে গবেষকরা ৬টি গাছের সন্ধান পেয়েছেন। এসব উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহ হলো Trachyspermum ammi  (রাঙা জিরা), Embelia schimper, Solanum nigrum (ফুটিবেগুন বা তিতবেগুন), Canabis sativa (গাঁজা বা ভাং), Acacia nilotica (বাবলা), Daucus maritimus (বন্য গাজর)। পরবর্তীতে তিউনিসিয়ার গবেষক এস.মিলাদি ও তাঁর সাথীরা ২০১২ সালে জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্ট জার্নালের ২৬ সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করেন, ডকাস ম্যারিটিমাস প্রজাতির বন্যগাজরের বীজ এইআইভি টাইপ১, ডেঙ্গু, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে মধ্যম কার্যকর।


গবেষকবৃন্দ বিশ্ব গবেষণার প্রেক্ষিতে মোট ১১৫ প্রজাতির উদ্ভিদের খোঁজ পেয়েছেন যেগুলো কোনো না কোনো ভাইরাস জীবাণুর বিরুদ্ধে কম বেশি কার্যকর। এগুলোর মধ্য থেকে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে, ২৪ প্রজাতির গাছ দুই বা ততোধিক ভাইরাস জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে (সারণি দ্রষ্টব্য)। এমনকি গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, এই ২৪ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ২ প্রজাতির উদ্ভিদ ৪ রকমের ভাইরাস জীবাণুকে দুর্বল করতে পারে। এ দুটি প্রজাতির উদ্ভিদ হলো রসুন ও বন্য গাজর। রসুন হার্পস ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস-৩, রাইনোভাইরাস ও ভেসিকুলার স্টোমাটাইটস ভাইরাস প্রতিরোধী। এই ২৪টি গাছের সব গাছই হার্পস ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। এসব উদ্ভিদের মধ্যে কিছু উদ্ভিদের দেখা আমরা এদেশেও পাই। যেমন- রসুন, চা, রাধাচূড়া, ছোলা, ডায়ান্থাস, বাবলা, ঘোড়ানিম, পোলাওপাতা ইত্যাদি। শুধু ভাইরাস বিরোধী উদ্ভিদের তালিকা তৈরিই নয়, গবেষকরা সেসব উদ্ভিদের কোন কোন রাসায়নিক উপাদান ভাইরাস বিরোধী ভূমিকা পালন করে তাও উল্লেখ করেছেন।


ভাইরাস বিরোধী পঞ্চরত্ন
সেজ ও পুদিনা : পুদিনাজাতীয় এক ধরনের বিরুৎ জাতীয় মসলা গাছ। অন্তত ছয়টি সূত্র থেকে জানা গেছে এ গাছ ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ে লোক চিকিৎসায় বহুকাল আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেজ গাছের ডাল-পাতায় রয়েছে স্যাফিসিনোলাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা মানুষের এইডস রোগের জীবাণু এইচআইভি-১ এর বিরুদ্ধে কার্যকর। এই রাসায়নিক উপাদান এইডস রোগের ভাইরাস জীবাণুকে মানুষের দেহকোষে অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। পুদিনা বা চা ভাইরাস সংক্রমণ সারাতে লোক চিকিৎসায় প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে অনেক নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ব্যবহার করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পুদিনা পাতায় থাকা এক ধরনের অ্যাসেনসিয়াল অয়েল বা তেল মেনথল ও রোসম্যারিনিক এসিড এন্টিভাইরাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে ২৪ জন গবেষকের গবেষণা ফলাফল থেকে জানা গেছে। বিশেষ করে এই পাতার রস আরএসভি বা শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণকারী ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে। করোনাভাইরাসের জন্য এ গাছ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।


তুলসী : একটি টেস্ট টিউব পরীক্ষায় দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের তুলসী হার্পস ও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ ভাল কাজ করে। তুলসী পাতায় থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ বিশেষত এপিজেনিন ও ইউরোসোলিক এসিড এসব ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে। তুলসী রস সেবনে দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। প্রায় ৪ সপ্তাহ ধরে ২৪ জন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের ওপর পরিচালিত বারোটি গবেষণা সূত্রের ফলাফলে দেখা গেছে, ওসব মানুষেরা ৩০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ তুলসী রস সেবনের ফলে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধী হেল্পার টি কোষ ও ন্যাচারাল কিলার কোষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পেরেছে। এই উভয় ধরনের কোষই মানুষের দেহে এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।


মৌরী বা পানমৌরী : টেস্ট টিউব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে মৌরীর রস হার্পস ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-৩ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ভালো কাজ করতে পারে। প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা গবাদিপশুর রোগ। মৌরীর ট্রান্স-এনথিওল হলো প্রধান রাসায়নিক উপাদান যার এই শক্তি রয়েছে।


রসুন : মোট ২৩ জন মানুষের ওপর রসুনের কার্যকারিতা নিয়ে এক গবেষণা চালানো হয় যেসব মানুষদের ভাইরাসজনিত আঁচিল ছিল। রসুনের রস সেসব আঁচিলে প্রয়োগের ফলে  ২ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের সেসব আঁচিল দূর হয়। এ ছাড়া  টেস্ট টিউব পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, রসুন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং বি, এইচআইভি, এইচএসভি-১, ভাইরাল নিউমোনিয়া ও রাইনোভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর। রসুন দেহে ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।


আদা : নানাভাবে আদা খাওয়া যায়। চা বা লজেন্স যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন তা উপকার করে। টেস্টটিউব পরীক্ষায় দেখা গেছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, আরএসভি, ফেলিন ক্যালিসিভাইরাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে আদা বেশ ভালো কাজ করে। আদায় থাকা জিনজারোলস ও জিঞ্জারোন এসব ভাইরাস জীবাণুকে দেহকোষে অনুপ্রবেশে বাধা দেয়। জ্বর ও ব্যথা সারাতে বিশ্বব্যাপী আদার ব্যবহার রয়েছে। দ্য জার্নাল অব প্লান্ট মেডিসিনে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদা মানুষের শ্বাসতন্ত্রের সাইনিসাটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।


দরকার আরও গবেষণা
সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন গাছপালা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। বহু গাছপালার মধ্যে এন্টিভাইরাল কম্পাউন্ড বা এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে যা ভাইরাস সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এখন সময় এসেছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন গাছের সন্ধান করার। গাছের যেহেতু ভাইরাস বিরোধী ক্ষমতা আছে, সেহেতু এই গ্রহে এমন গাছপালা নিশ্চয়ই আছে যা দিয়ে আমরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারি। যেসব গাছ অন্য আরও অনেক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে, সেসব গাছ করোনাভাইরাসকেও ঠেকাতে পারে কিনা তা দেখা যেতে পারে। দরকার এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা ও খুঁজে দেখা।

 

অতিরিক্ত পরিচালক (এলআর), ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই- মেইল : kbdmrityun@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon